ফটিকছড়ি, রাউজান ও হাটহাজারীতে দুই লাখ মানুষ পানিবন্দী
দিনাজপুর টিভি ডেস্ক
আপলোড সময় :
২২-০৮-২০২৪ ০৩:০৬:৩৭ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় :
১২-১০-২০২৪ ১০:১০:১৫ অপরাহ্ন
পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, রাউজান ও হাটহাজারীর বিভিন্ন এলাকা। বন্যায় পানিবন্দী হয়ে রয়েছেন তিন উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষ।
বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। এতে চরম দুর্ভোগে দিন কাটছে এসব এলাকার বাসিন্দাদের। ফটিকছড়ি: আজ বুধবার উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের সব কটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ধুরং ও হালদা নদীতে পানির চাপ বাড়ায় কয়েকটি স্থানে ভেঙে গেছে বেড়িবাঁধ। ঘরবাড়িতে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি। উপজেলার বেশির ভাগ গ্রামীণ সড়ক পানিতে ডুবে রয়েছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ফসলি জমির।বন্যার কারণে ফটিকছড়ি থেকে হেঁয়াকো রামগড় সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে উপজেলা সদর ও খাগড়াছড়ির রামগড়ের বাসিন্দাদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে দুর্ভোগে পড়ছেন।
এ ছাড়া উপজেলার মাইজভান্ডার-রাউজান সড়কও পানিতে ডুবে রয়েছে।ফটিকছড়ির ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ড বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পশ্চিম ধর্মপুরে প্রায় ঘরবাড়িতে পানি ঢুকেছে। সড়কেও হাঁটুপানি জমে রয়েছে।উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কমবেশি সব এলাকা প্লাবিত। প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।রাউজান: উপজেলার পশ্চিম নোয়াপাড়া, মোকামীপাড়া, সাম মাহালদারপাড়া, ছামিদর কোয়াং, কচুখাইন, দক্ষিণ নোয়াপাড়া; উরকিরচর ইউনিয়নের মইশকরম, সওদাগরপাড়া, সুজারপাড়া, পূর্ব উরকিরচর, খলিফার ঘোনা ও বৈইজ্জাখালি, বাগোয়ান, পশ্চিম গুজরা, গহিরা, নোয়াজিশপুর, চিকদাইর, ডাবুয়াসহ কয়েকটি গ্রামের অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে রয়েছেন।
আজ বিকেলে হালদা নদীর তীরবর্তী নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ছামিদর কোয়াং, মোকামী পাড়া ও উরকিরচর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামে ঢোকার দুটি সড়ক কোমরসমান পানিতে ডুবে গেছে। গ্রামের প্রায় ২০০ পরিবার অনেকটা ঘরবন্দী সময় কাটাচ্ছেন। এলাকার কয়েক শ একর চাষাবাদের জমি ৫ থেকে ৬ ফুট পানি নিচে ডুবে রয়েছে। পানির তোড়ে ভেঙে পড়েছে বিদ্যুতের কয়েকটি খুঁটি। এতে বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে আশপাশের গ্রাম।স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হালদা নদীর হাটহাজারীর অংশে বেড়িবাঁধ দেওয়া হলেও রাউজান অংশে তা নেই। তাই অমাবস্যা-পূর্ণিমা তিথিতে জোয়ারের উচ্চতা বাড়ার কারণে গ্রামগুলোতে পানি ঢুকে পড়ে। এবার বৃষ্টির কারণে পানি আরও বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন তাঁরা।রাউজানের ছামিদর কোয়াং গ্রামের বাসিন্দা সালামত উল্লাহ বলেন, তাঁদের গ্রামের প্রায় সব বাড়িঘর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়ক ভেঙে গ্রামের যোগাযোগব্যবস্থা বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। গাড়ি চলছে না।মোকামীপাড়ার বাসিন্দা এস এম হাসান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাড়ির সামনে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পুকুরে ডুবে গেছে। বাড়ির বাসিন্দারা বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ভোগান্তির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তিনি বলেন, তাঁদের চলাচলের মূল সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় হেঁটে চলারও পথ নেই। মানুষজন লাঠিতে ভর করে কোনোরকমে আসা-যাওয়া করছেন।
এলাকার মাছের খামারি কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, তাঁরা কয়েকজন মিলে চারটি পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করেছেন।
এসব পুকুরের একটিতেও কোনো মাছ অবশিষ্ট নেই। সব মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এতে তাঁদের পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অংগ্যজাই মারমা প্রথম আলোকে বলেন, রাউজানে নদীর পানি বেড়ে অনেক গ্রাম তলিয়ে গেছে। এর ফলে মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ক্ষতি হওয়ার খবর তাঁদের কাছে আসছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বরাদ্দ চাওয়া হবে। হাটহাজারী: উপজেলার বন্যায় প্লাবিত এলাকার মধ্যে রয়েছে বুড়িশ্চর, শিকারপুর, গড়দোয়ারা, দক্ষিণ মাদার্শা, উত্তর মাদার্শা, মেখল, পৌরসভার একাধিক ওয়ার্ড, নাঙ্গলমোড়া, ছিপাতলী। হালদা নদীতে পাহাড়ি ঢল বাড়ায় নদীর উপচে পড়ে তীরবর্তী এলাকার বাড়িঘর পানিতে ডুবে রয়েছে। হাটহাজারীর শিকারপুরের বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য লোকমান হাকিম বলেন, বন্যার কারণে তাঁরা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। ঘরে পানি, উঠানেও পানি এবং সড়কও কোমর সমান পানিতে ডুবে রয়েছে।
হাটহাজারীর ইউএনও এবিএম মশিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর উপজেলার ৭ থেকে ৮টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী রয়েছেন প্রায় অর্ধলাখ মানুষ।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dinajpur TV
কমেন্ট বক্স